বিশ্বের উত্তাল নদীগুলোর মধ্যে পদ্মা অন্যতম। পানিপ্রবাহের দিক থেকে দক্ষিণ আমেরিকার আমাজনের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী পদ্মা। এ ধরনের খরস্রোতা নদীতে এর আগে সেতু নির্মাণ হয়নি। পানিপ্রবাহের দিক থেকে পদ্মার প্রবাহ বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয়। নদীর তলদেশে ব্রিজের যে কাজ হবে সেখানে পদ্মার পানিপ্রবাহ আমাজন নদীর পরেই। এই হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পানিপ্রবাহের মধ্যে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতু।পদ্মায় প্রতি সেকেন্ডে এক লাখ ৪০ হাজার কিউবিক মিটার পানি প্রবাহিত হয় নদীর যে জায়গায় সেতুটি নির্মিত হবে, সেখানে নদী প্রায় ৬ কি:মি প্রশস্ত।সম্পূর্ণ নিজস্ব
অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো একটি স্থাপনার উদ্যোগ নেওয়া সাহসী কাজ। পদ্মা বহুমুখী সেতু ‘বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার মর্যাদা পাবে’। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর নির্মাণাধীন একটি বহুমুখী সেতু।এই সেতু দিয়ে যুগপৎভাবে যানবাহন ও ট্রেন চলাচল করবে। এর মাধ্যমে লৌহজং, মুন্সিগঞ্জ এর সাথে শরিয়তপুর ও মাদারীপুর যুক্ত হবে, ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সাথে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে। পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দ্বিতলবিশিষ্ট এই সেতু নির্মিত হবে কংক্রিট আর স্টিল দিয়ে। যার ওপর দিয়ে যানবাহন আর নিচে দিয়ে ট্রেন চলবে। মোট ৪১টি স্প্যান (স্টিলের কাঠামো) স্থাপন করা হবে পদ্মা সেতুর পিলারের ওপর। পিলারের ওপর ক্যাপ বসিয়ে তার ওপর একেক করে একেকটি স্প্যান স্থাপন করা হবে। এর মাঝখানে হবে রেলপথ। এর ওপরে কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে করা হবে যানবাহনের চলাচলের পথ। মূল প্রতিটি স্প্যানের ওজন প্রায় দুই হাজার ৯০০ টন। পুরো পদ্মা সেতুর রং হবে সোনালি রঙের। কারণ হিসেবে দেওয়ান আবদুল কাদের বলেন, সেতুটির কাঠামোর বড় একটি অংশ স্টিল ও লোহার তৈরি। বেশি তাপ পড়লে এর কাঠামোর ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। সোনালি রং সূর্যের অধিক তাপ শোষণ করে না। তাই পদ্মা সেতুর রং হবে সোনালি।- প্রকল্পের নামঃ পদ্মা বহুমূখী সেতু প্রকল্প।
- সেতুর দৈর্ঘ্যঃ ৬.১৫ কিঃমিঃ
- সেতুর প্রস্থঃ ১৮.১০ মি (৫৯.৪ ফু)
- উপাদানঃ কংক্রিট, স্টিল
- নির্মানকারিঃ চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিঃ (কাজটি ২৬ নভেম্বর ২০১৪ -তে দেওয়া হয়।)
- নির্মান শুরুঃ ডিসেম্বর ৭, ২০১৪
- নির্মান শেষঃ ডিসেম্বর ২০১৮
- উন্মেষিতঃ ডিসেম্বর, ২০১৮
- ব্যয়ঃ এতে ব্যয়ের পরিমান ১২,১৩৩.৩৯ কোটি টাকা
- নদীশাসন কাজ দৈর্ঘ্যে : ১৪ কি:মি:
- ঠিকাদার : সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন লিমিটেড, চায়না।
- পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক কত কিলোমিটার? প্রান্তে ১৪ কিলোমিটার।
- পদ্মা সেতু প্রকল্পে জনবল কতজন? প্রায় ৪ হাজার।
- পানির স্তর থেকে পদ্মা সেতুর উচ্চতা কত? ৬০ ফুট।
- পদ্মা সেতুর পিলার সংখ্যা কত? উত্তর : ৪২টি
- প্রতি পিলারের জন্য পাইলিং কয়টি? ৬টি
- পদ্মা সেতুর মোট পাইলিং সংখ্যা কত? উত্তর : ২৬৪টি।
- পদ্মা সেতুর পাইলিং গভীরতা কত? ৩৮৩ ফুট।
- পদ্মা সেতুতে কী কী থাকবে? গ্যাস , বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার লাইন পরিবহন সুবিধা।
- পদ্মা সেতুর ধরন কেমন? দ্বিতলবিশিষ্ট এই সেতু কংক্রিট আর স্টিল দিয়ে নির্মিত হবে।
- কততম স্থান দখল করে নিয়েছে পদ্মা সেতু? বঙ্গবন্ধু সেতুকে টপকে বিশ্বে দীর্ঘতম সেতু হিসেবে এগারো তম স্থান দখল করে নিয়েছে পদ্মা সেতু।
- পদ্মা সেতুর ফলে কোন কোন জেলা যুক্ত হবে ? লৌহজং, মুন্সিগঞ্জ এর সাথে শরিয়তপুর ও মাদারীপুর যুক্ত হবে
- পদ্মা সেতুর স্প্যান (স্টিলের কাঠামো) সংখ্যা কত ? ৪১ টি।
পদ্মা এক অস্থির নদী। দুই তীরে ভাঙ্গাগড়া চলে প্রতি বছর। বর্ষাকালে পদ্মা নদীতে স্রোতের বেগ এত বেশি থাকে যে, সেতুর নকশা করার সময় প্রকৌশলীদের কাছে এটি এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় । একদিকে গঙ্গা, আরেকদিকে ব্রহ্মপুত্র দক্ষিণ এশিয়ার এই দুটি বিশাল এবং দীর্ঘ নদীর অববাহিকার পানি এই পদ্মা দিয়েই বঙ্গোপসাগরে নামছে। উজান থেকে নেমে আসা এই স্রোতের ধাক্কা সামলাতে হবে ব্রীজটিকে। সেই সঙ্গে নদীর দুই তীরে নদীশাসনে প্রচুর অর্থ খরচ করতে হবে।বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পলি বহন করে এই দুই নদী। বলা যেতে পারে এই দুই নদীর পলি জমেই গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের অনেকখানি অঞ্চল। এই সেতুর নকশা করার ক্ষেত্রে এই নদী বাহিত পলির বিষয়টিকে বিবেচনায় নিতে হয়েছে প্রকৌশলীদের।পদ্মা সেতু নির্মিত হচ্ছে এমন এক অঞ্চলে যেখানে ভূমিকম্পের ঝুঁকিও আছে। এ নিয়ে সেতুর নকশা তৈরির আগে বিস্তর সমীক্ষা করা হয়েছে।কিছু সমীক্ষা করেছে বাংলাদেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। সেতুর নকশাটিকে এজন্যে ভূমিকম্প সহনীয় করতে হয়েছে। পদ্মা সেতুর ভিত্তির জন্য পাইলিং এর কাজ করতে হবে নদীর অনেক গভীরে। বিশ্বে কোন নদীর এতটা গভীরে গিয়ে সেতুর জন্য পাইলিং এর নজির খুব কম। প্রকৌশলীদের জন্য এটাও এক বড় চ্যালেঞ্জ।
পদ্মা সেতুর সংক্ষিপ্ত বিবরণ :
পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ ৫টি ভাগে বিভক্ত। এরমধ্যে রয়েছে:- মূল সেতু, নদী শাসন, দু’টি লিংক রোড এবং অবকাঠামো (সার্ভিস এলাকা) নির্মাণ।এর মধ্যে মূল নির্মাণ কাজ পাইলিং ও নদীশাসন।
প্রকল্পের নামঃ পদ্মা বহুমূখী সেতু প্রকল্প।
প্রকল্পের বিভিন্ন উপাঙ্গসমূহঃ
ক) মূল সেতু
খ) নদীশাসন কাজ
গ) জাজিরা সংযোগ সড়ক ও আনুসঙ্গিক সুযোগ সুবিধা
ঘ) মাওয়া সংযোগ সড়ক ও আনুসঙ্গিক সুযোগ সুবিধা
ঙ) সার্ভিস এরিয়া-২
চ) পুনর্বাসন
ছ) পরিবেশ
জ) ভূমি অধিগ্রহণ
ঝ) সিএসসি (মূল সেতু ও নদীশাসন)
ঞ) সিএসসি (সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়া-২)
ট) ইঞ্জিনিয়ারিং সাপোর্ট এন্ড সেফটি টিম (ইএসএসটি)
No comments:
Post a Comment