নতুন
চাকরিতে যোগদান কিংবা চাকরিতে বদলি চাকরি জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, বিশেষ করে সরকারি চাকরিতে। অফিসের
এই নতুন পরিবেশে খাপখাওয়াতে আপনার জন্য রইল ১০ পরামর্শ।
এক.
প্রাথমিকভাবে
সমস্যাটা মানসিক। তাই
মনকে মানাতে হবে সবার আগে। নতুন
পরিবেশ। সুতরাং
তাপমাত্রা থেকে শুরু করে আপনার চেয়ার-টেবিল পর্যন্ত সবই নতুন। বাহ্যিক
এই পরিবর্তন যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তারচেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ মানসিক পরিবর্তন।
অনেকে
এই পরিবর্তনের সঙ্গে সহসা খাপখাওয়াতে পারেন না। মনের
সঙ্গে এই যুদ্ধে আপনাকে জয়ী হতে হবে।
দুই.
বদলি
হলে বসও পাল্টে গিয়ে নতুন বস আসতে পারে। সে
ক্ষেত্রে আবার সেই প্রথম দিনের মতো বসকে বোঝার চেষ্টা করুন। তাঁর
নির্দেশনা বোঝার চেষ্টা করুন। শুরুর
দিনগুলোতে সৃষ্টিশীল না হয়ে স্রেফ নির্দেশনা অনুসরণ করেও নতুন জায়গাটার হালচাল বুঝে নিন।
তিন.
নতুন
স্থানে এসে পেয়ে যেতে পারেন নতুন সহকর্মীদের। তাদের
মধ্যেই আপনি পেয়ে যাবেন আপনার আগামী দিনের শুভাকাঙ্ক্ষীকে এবং পেয়ে যাবেন আপনার শত্রুকেও। তাই
প্রথম দিনেই সবাইকে আপন ভেবে সব দূরত্ব ঘুচিয়ে ফেলার দরকার নেই, আবার শত্রু মনে করে এড়িয়ে যাওয়ারও দরকার নেই। মধ্যম
পন্থা অবলম্বন শ্রেষ্ঠ উপায়।
চার.
নতুন
অফিসের থাকবে নতুন সংস্কৃতি। সহকর্মীদের
সঙ্গে সম্পর্ক, আচরণ, পোশাক-আশাক, বিরতি, অফিস সময়, নিয়মকানুন, ছুটি, সবই নতুন। আপনার
দায়িত্ব হবে এসব উপাদানের দিকে তীক্ষ নজর
রাখা এবং নতুন অফিস সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া।
পাঁচ.
নতুন
যে দায়িত্ব পেয়েছেন এবার সেদিকে মনোযোগ দিন। কাজ
শুরু করুন। বদলি
হয়ে যোগদান করার পর পরই সব কাজে বাড়তি সতর্কতা, বাড়তি নজরদারি এবং দ্রুত শিখে নেওয়ার প্রতি জোড় দেবেন। আর
কাজ করবেন মাঝারি গতিতে। না
বুঝে অতি দ্রুত কোনো কাজ করবেন না।
আপনার
নতুন দায়িত্বে শুরুতে কয়েক দিন হয়তো ততটা চাপ থাকবে না অথবা ভুলগুলো ক্ষমার চোখে দেখা হবে। এই
সুযোগ কাজে লাগান। দ্রুত
কাজের গতি বাড়িয়ে পুরো ফর্মে ফিরে আসুন।
ছয়.
কাজে
যোগ দিলেই দেখতে পাবেন ছোটখাটো অনেক কিছুই নতুন। প্রতিনিয়ত
আপনার ভেতরে আগের অফিসের সঙ্গে একটা তুলনামূলক বিতর্ক চলতেই থাকবে। আগের
বস, আগের অফিস, আগের নিয়মনীতি। কোথাও
দেখবেন আগের চেয়ে নতুনটা ভালো, কোথাও পাবেন খারাপ। ভালোগুলোতে
আনন্দিত হন, কিন্তু খারাপগুলোতে একদম ভেঙে পড়বেন না। মানসিকভাবে
এই অস্বস্তির জায়গাগুলোই সামলে নিতে হয়।
সাত.
যারা
বিবাহিত এবং সন্তানরা স্কুলে পড়ছে, তাদের বড় বিপদ। পরিবারসহ
বদলি হওয়া আর জীবন বদলে যাওয়া একই কথা। সব
কিছু আবার ঢেলে সাজাতে হয়। ভালো
স্কুলে ভর্তি, টিচার, কোচিং, বাজার, হাসপাতাল, সব কিছুই আবার গুছিয়ে নিতে হয়। অথবা
পরিবার ছেড়ে একা নিসঙ্গ জীবন। এই
পরিস্থিতি জটিল। মানসিকভাবে
অবিচল ও সাহসী থাকতে
হবে। সবচেয়ে
সাহায্য করতে পারবে নতুন স্থানের আপনার সহকর্মীরা।
আট.
শুরুর
দিকের এই পারিবারিক অস্থিরতা আপনার কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তাই
কাজের গুরুত্ব অনুযায়ী যতটা সময় বের করতে পারেন দ্রুত পারিবারিক সমস্যাগুলো গুছিয়ে ফেলুন। ধৈর্য
ধরলে আস্তে আস্তে সবটাই ঠিক হয়ে যাবে।
নয়.
শুরুর
দিকে নিজের কাজের পাশাপাশি অন্যদের কাজও মনোযোগ দিয়ে দেখুন। কাজের
ফাঁকে ফাঁকে যে গল্পগুলো হয় সেগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনুন। অফিসের
সহকর্মীদের, বসদের, কার্যক্রমের, অনিয়ম-দুর্নীতির ঝুঁকি আর সমস্যা নিয়ে নানা কথা হয়। খেয়াল
করুন। এখানে
আপনার চলার পথ নির্ধারণের অনেক রসদ থাকবে।
দশ.
সবার
সঙ্গে সহজ ও সাবলীল সম্পর্ক
আপনার নতুন জগেক দ্রুত আনন্দময় করে তুলবে। যাঁদের
উপযুক্ত মনে করেন, তাঁদের নিয়ে ঘরোয়া পার্টিরও আয়োজন করতে পারেন। যাঁরা
পার্টির বাইরে থাকবেন, তাঁরা যেন কিছু মনে না করে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
নতুন
পরিবেশ, নতুন দায়িত্ব, নতুন চ্যালেঞ্জ সব সময়ই অনেক কিছু শেখায়। যাঁরা
আরো দক্ষ হয়ে উঠতে চান, তাঁদের জন্য বদলি এক বিরল সুযোগ। নিজেকেও
যাচাই করা যায়। প্রতিষ্ঠানও
পরখ করে নিতে পারে আগামীর পথ প্রদর্শককে। সুতরাং
ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে প্রতিটি সিঁড়ি টপকে যান।
No comments:
Post a Comment