মূল লেখাটি প্রথম আলো থেকে নেওয়া । আপনি মূল লেখাটি এখান থেকে পড়তে পারেন । |
ক্লাসের ‘গ্রুপ ওয়ার্ক’ হেলাফেলা করা যাবে না
এম জুলফিকার হোসেন
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও মুখ্য পরামর্শক, গ্রো অ্যান্ড এক্সেল
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও মুখ্য পরামর্শক, গ্রো অ্যান্ড এক্সেল
বিশ্ববিদ্যালয় পেরোনো একজন তরুণ চাকরিপ্রার্থীর
মধ্যে চাকরিদাতারা কী খোঁজেন?
প্রথমেই প্রয়োজন যোগাযোগের দক্ষতা। শুধু ভালো কথা বলতে পারলেই
হবে না, কাগজে-ই–মেইলে-এসএমএসে
যোগাযোগের কায়দাকানুনও জানতে হবে। দ্বিতীয়ত, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা। ছোট থেকে বড়,
চাকরি করতে গেলে
আপনাকে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। আপনি মাথা ঠান্ডা
রেখে সমস্যার মোকাবিলা করতে পারেন কি না, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। ইতিবাচক মনোভাব থাকতে
হবে, নেতৃত্বের গুণাবলি
থাকতে হবে। দলগতভাবে কাজ করা শিখতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের বিভিন্ন ‘গ্রুপ ওয়ার্ক’
করতে হয়। সেখানে তো আমরা দল বেঁধে কাজের চর্চা করতে পারি।
নিশ্চয়ই। ক্লাসে যেসব গ্রুপ অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়, অধিকাংশ সময় দেখা
যায় একজনই সব কাজ করে। বাকিরা তেমন কোনো ভূমিকা রাখে না। যারা কাজ করল না,
তারা যেমন নিজের
ক্ষতি করল, তেমনি যে একা সব কাজ করে ফেলল, সে-ও বোকামি করল। অন্যের সঙ্গে কাজ করা
শিখতে হবে। আবার একটা কাজ ভাগাভাগি করে করাও শিখতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনে কাজ করলে দলগত কাজের চর্চা
হয়। এখন অনেক রকম স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই কাজগুলোও
আপনাকে এগিয়ে রাখবে। সেমিস্টার ব্রেকের সময় অনেক ছেলেমেয়ে খণ্ডকালীন
চাকরি করে। এটা খুব ভালো। কাজটা ছোট হলেও কিন্তু তাতে শেখার সুযোগ থাকে।
শিক্ষানবিশের সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে। যতটা সম্ভব শিখতে হবে।
সে ক্ষেত্রে শেখার আগ্রহ তো থাকতে হবে...
অবশ্যই। আরেকটা ব্যাপার হলো, এখন কিন্তু চাকরির বাজারটা খুব দ্রুত ‘ডিজিটাল’
হয়ে উঠছে। কম্পিউটারের কাজ যতটা সম্ভব শিখে রাখা দরকার। বিভিন্ন
কর্মশালায় অংশগ্রহণ করতে হবে। নেটওয়ার্কিং করা জানতে হবে। সহশিক্ষা
কার্যক্রমগুলোতে বেশি জোর দিতে গিয়ে আবার রেজাল্ট খারাপ করলে চলবে না।
সিজিপিএ একটা মানদণ্ড। দুটোই ঠিক রাখতে হবে।
সহশিক্ষা কার্যক্রম আপনাকে এগিয়ে রাখবে
প্রয়োজন কর্মস্পৃহা ও আত্মবিশ্বাস
মো. মিজানুর রহমান
মো. মিজানুর রহমান
জেনারেল ম্যানেজার,
মানবসম্পদ বিভাগ,
অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার
লিমিটেড
আজকাল ইন্টারভিউয়ের ধরন অনেকটা বদলে গেছে...
আমাদের প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২-৩ ঘণ্টার ইন্টারভিউ হয়। প্রথমে
আধঘণ্টার লিখিত পরীক্ষা। লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্নের উত্তর অনুযায়ী আবার
অনেকটা সময় নিয়ে আমরা একজন চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে কথা বলি। চা খাই, গল্প করি। সম্পর্কটা
সহজ হয়ে গেলে একজনকে বুঝতে সুবিধা হয়। অনেক প্রতিষ্ঠানে চাকরির
আগে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষাও দিতে হয়।
সিভিতে কী ধরনের ভুল চোখে পড়ে?
অনেকেই শুরুতে নিজের নামের পর বাবার নাম, মায়ের নাম, ঠিকানা ইত্যাদি লিখতে অনেক জায়গা নিয়ে
ফেলে। কিন্তু কেউ যদি শুরুতে তি-চার লাইনে নিজের লক্ষ্যটা পরিষ্কারভাবে লেখে,
তাহলে কিন্তু আমি
তার প্রতি আগ্রহী হব।
কোন দুটি দক্ষতা থাকা সবচেয়ে জরুরি?
আমি মনে করি কর্মস্পৃহা ও আত্মবিশ্বাস।
ইন্টারভিউতে কীভাবে আপনারা সেটা যাচাই করেন?
একটা ছেলের উদাহরণ দিই। সিভিতে দেখলাম, সে শেরপুরের একটা স্কুল থেকে
মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পেরিয়ে ভর্তি হয়েছে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু এমবিএ করেছে একটা মোটামুটি মানের
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তো আমরা প্রশ্ন করলাম, তুমি জাহাঙ্গীরনগর থেকে
এমবিএ করলে না কেন? ছেলেটা বলল, পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তার একটা
চাকরির দরকার ছিল। চাকরির খোঁজেই সে ঢাকায় চলে এসেছে, এমবিএ করেছে। সব শুনে মনে
হলো, ওর
মধ্যে কর্মস্পৃহা আছে। যে ছেলেটা শেরপুর থেকে ঢাকায় এসেছিল,
সে জাহাঙ্গীরনগর
থেকে স্নাতক শেষ করেই চাকরির খোঁজে নেমেছে। সে আমাদের সঙ্গে কাজ
করছে প্রায় দুই বছর হয়ে গেল। সম্প্রতি সে একটা বৃত্তি পেয়ে দেশের বাইরে
চলে যাচ্ছে।
একটা সময় বলা হতো, ‘মামার জোর’ ছাড়া চাকরি হয় না। এ কথা কি
এখনো প্রযোজ্য?
এখনকার সময়ে চাকরির বাজার যেমন প্রতিযোগিতামূলক, মামার জোরে
চাকরি হলেও বেশি দিন টেকা যাবে না। কেউ যদি নিজের যোগ্যতায় চাকরি না পায়,
তার মধ্যে যেমন
হীনমন্যতা কাজ করবে, তেমনি প্রতিষ্ঠানও বঞ্চিত হবে।
দলগত কাজের মানসিকতা তৈরি করতে হবে
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি যদি প্রশ্নপত্র হয়, সিভি তার উত্তর সাব্বির আহমেদ
মানবসম্পদপ্রধান, খুলনা অঞ্চল, গ্রামীণফোন
রেজাল্ট, নাকি সহশিক্ষা কার্যক্রম—কোনটা বেশি
জরুরি?
নির্ভর করছে আপনি কী ধরনের কাজ করতে চান, তার ওপর। আমি যদি সেলস বা বিপণনের
জন্য একজন কর্মী নিয়োগ দিতে চাই, তাহলে খুঁজব কে ভালো কথা বলতে পারে?
কার যোগাযোগের
দক্ষতা ভালো? যারা বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে বিভিন্ন ক্লাব, খেলাধুলা, বিতর্কের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তারা এসব ক্ষেত্রে প্রাধান্য
পাবে। আবার আমি যদি গবেষণা বা বিশ্লেষণধর্মী কাজের জন্য কাউকে খুঁজি,
তখন দেখব কার
সিজিপিএ ভালো। তবে একটা চাকরির জন্য যখন অনেকগুলো সিভি জমা পড়ে, প্রাথমিক বাছাই হয়
সাধারণত রেজাল্ট দেখে। অতএব রেজাল্ট ভালো হলে আপনি এগিয়ে থাকবেন।
সিভি বা জীবনবৃত্তান্ত চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে
কতটা ভূমিকা রাখে?
আমি সব সময় বলি, চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি যদি প্রশ্নপত্র হয়,
সিভি হবে আপনার
উত্তরপত্র। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটা খুব ভালো করে দেখতে হবে। প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে
খোঁজখবর করতে হবে। সেই অনুযায়ী সাজাতে হবে আপনার সিভি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যদি তিনটি
পরামর্শ দিতে হয়, কী বলবেন?
প্রথমত, নিজের লক্ষ্যটা জানুন। আপনি যদি প্রশ্ন করেন, তুমি কী হতে চাও? দেখবেন অধিকাংশ ছেলেমেয়ে এই প্রশ্নের
উত্তর দিতে গিয়ে হিমশিম খাবে। অতএব সবার আগে জানতে হবে, আমি কী করতে চাই,
কী হতে চাই। যখন লক্ষ্যটা
জানা হয়ে যাবে, তখন শুরু হবে দ্বিতীয় ধাপ—লক্ষ্য সম্পর্কে ভালোমতো জানা।
কোথায়, কী কী
কাজের সুযোগ আছে। কী কী দক্ষতা দরকার? স্নাতকের তৃতীয় বর্ষ থেকেই এসব
খোঁজখবর করতে হবে। তৃতীয় পরামর্শ হলো, লক্ষ্য অনুযায়ী প্রস্তুতি শুরু করা।
ধরুন আপনি মার্কেটিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চান। বিভিন্ন মেলায় সুযোগ পেলেই
বিপণনকর্মী হিসেবে কাজ করুন। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ঘুরে দেখুন, সেখানকার কর্মীদের
সঙ্গে কথা বলুন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিভিন্ন বিজনেস কেস
কমপিটিশন হয়, সেগুলোতে অংশ নিন। তাহলে আপনি এগিয়ে থাকবেন।
No comments:
Post a Comment